বিদায় পর্ব শেষ করে হিমালয়া থেকে রওনা দিয়েছি চমরং এর দিকে, সেটা ট্রেকিং এর পঞ্চম দিন বুধবার; শুরু করেছিলাম শনিবার, এবিসিতে পৌঁছেছিলাম মংগলবার সকালে। পল দা আজকে দুজন অসুস্থ ট্রেকারের সাথে হেলিকপ্টারে পোখারা চলে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; কাঠমান্ডুতে ওনার জরুরী কাজ পড়েছে।
আজ আমার সংগী হয়েছে জাবির, এমনকি গতকালও এমবিসি থেকে হিমালয়া পর্যন্ত সে আমার সংগী হয়ে ছিল এবং আমাকে আগলে রেখেছিল! যেহেতু জ্বরের ঘোরে গতকাল বিড়বিড় করেছি, সে তাই আমাকে আজকেও সংগ দিলো এবং সারাটা দিন আমার ডাউন জ্যাকেটটা নিজের ব্যাগের সাথে ঝুলিয়ে রেখে পথ চলল।
পথিমধ্যে আমাদের অনেক বাতচিত হলো; সে নিজে ফটোগ্রাফার প্লাস ডিজাইনের অনেক কাজ করে। গতকাল যেহেতু কঠিন পথ পেরিয়ে এসেছি, আজ আর তাই বেশী টেনশন নেই, তবে একটা টেনশন আছে, তা হলো লোয়ার সিনওয়া থেকে চমরং উঠতে হবে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে।
নানান ঝর্ণা আর প্রকৃতি দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলেছি; আমার শরীর ভালো সাপোর্ট দিচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। আজকে থেকে ওষুধ রেগুলার ডোজে খাবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি; চমরংকে এখন মনে হচ্ছে বাড়ির কাছাকাছি।
হাঁটতে হাঁটতেই মনে হচ্ছিল, দুটি পাওয়ার ব্যাংকের যে ছোট ব্যাগটি ছিল, এটা কি ব্যাগে ঢুকিয়েছি? মনে হয় না। ওটা বালিশের ওপারে ছিল; জ্বরের ঘোরে ওটা ব্যাগে ঢুকাতে সম্ভবতঃ ভুলে গেছি! যাই হোক, সেটা এখন চেক করার কোন উপায় নেই। আপাততঃ টেনশন করছি, বাংলার রজনীকান্ত পারভেজ ভাইয়ের জন্য; উনি গতকাল হাঁটুতে চোট পেয়েছেন!
আমি আর জাবির এগিয়ে ছিলাম; হটাত এক জায়গায় থেমে দেখি, পারভেজ ভাই পিছন থেকে ঘোড়ায় চড়ে এগিয়ে আসছেন! কি কান্ড! এমন দৃশ্যও দেখতে হলো? তিনি চমরং পর্যন্ত ঘোড়া কন্ট্রাক্ট করেছেন ৫ হাজার রুপিতে। সহসাই তিনি আমাদের ছাড়িয়ে গেলেন; আমরা ঘোড়ার হেলেদুলে চলে যাওয়া দেখলাম।
আপার সিনওয়াতে লাঞ্চ করতে বসে পারভেজ ভাইকে পেলাম; ওনার খাওয়া শেষ। রওনা দেবার জন্য ঘোড়ার সহিস তাড়া দিচ্ছে, কিন্তু এর মধ্যেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। বৃষ্টি কিছুটা কমে এলে তিনি উঠে চলে গেলেন। আমি আর জাবির বৃষ্টি থামলে আবার রওনা দিলাম; টার্গেট প্রথমে লোয়ার সিনওয়া ও সবশেষে চমরং।
কষ্টকর পথ পেরিয়ে অবশেষে সন্ধ্যার আগে আগে চমরং এর ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউজে এসে উঠলাম; বড় সুন্দর এ রিসোর্টটি। এখান থেকে বিস্তৃত অঞ্চল চোখে পড়ে; লোয়ার সিনওয়া আর আপার সিনওয়া তো একেবারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমার আর পারভেজ ভাইয়ের রুম পড়েছে এমন জায়গায়, যেন মনে হবে অন্নপূর্ণা পর্বত আর ফিশ টেইল আমাদের আপন মহিমায় আগলে রেখেছে!