তাকসিম স্কয়ার – ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী ২ – Taksim Square

তাকসিম স্কয়ার - ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী ২ - Taksim Square
তাকসিম স্কয়ার - ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী ২ - Taksim Square

তাকসিম স্কয়ার

বাংলাদেশের সাথে ইস্তাম্বুলের বেশ কিছু মিল রয়েছে; বিশেষ করে ধনী-গরীব বৈষম্য, খাবার দাবার ও বাটপারির দিক থেকে, সে আলোচনায় পরে আসছি!

তাকসিম স্কয়ার একটা খোলামেলা জায়গা; এর আশপাশটা নানান ধরনের রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট ও মানি এক্সচেঞ্জে বোঝাই। ইস্তাম্বুলের বড় বৈশিষ্ট্য হলো আলোর ঝলকানি; এখানে রাতের বেলা সমস্ত জায়গায় কেবল চোখ ধাঁধানো আলো আর আলো।

সমস্ত মসজিদে অনেকগুলো করে ঝাড়বাতি থাকে, এ ছাড়াও আলোর ঝলকানির শেষ নেই, চারিদিকে কেবল বাতি আর বাতি। রাস্তাগুলিতেও প্রচুর লাইট থাকে আর দোকানপাটতো আলোতে সবসময়ই বোঝাই থাকে; এটাই এখানকার কালচার।

তাপমাত্রা ১০° সেলসিয়াস চলছে, ফিল টেম্পারেচার ৭°; ভেবেছিলাম এই তাপমাত্রায় আমি ফিনিশ হয়ে যাব, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। বাতাসের গতিবেগ ২০ কিলোমিটারের উপরে, তবুও দিব্যি সয়ে যাচ্ছি।

এই তাপমাত্রা এখানকার মানুষের জন্য দুধভাত টাইপের, আর কিছুদিন পর তুষার পড়বে, তখন বোঝা যাবে আসল শীত। এখন অবশ্য সবাই জ্যাকেট পরছে, তবে শীতের বিষয়ে একটা কেয়ারলেস ভাব আছে, অবশ্য এদের মধ্যে ন্যাচারালিই একটা কেয়ারলেস ভাব আছে। যাইহোক, এদের দেখেই আমারও এই শীত গা সওয়া হয়ে গেছে।

তাকসিম স্কয়ার জামে মসজিদ

তাকসিম স্কয়ারে পৌঁছতেই সবার আগে নজরে এলো তাকসিম স্কয়ার জামে মসজিদ; অন্যান্য মসজিদের মতই এটিও একটি অনন্য সুন্দর স্থাপনা। মুগ্ধ হয়ে কিছু ছবি তুললাম। কিন্তু কিছু তথ্য কিছুতেই জানা গেল না; ইংরেজিতে এরা কত অদক্ষ আর ইংরেজি এরা কতটা ঘৃণা করে সে আলাপ পরে করব। ইশারায় অনেক কাজ সেরে নিতে হচ্ছে।

এখানে বেশ কিছু পাথর দিয়ে বাঁধানো বসার জায়গা আছে; একটা জায়গায় একটু বসলাম আর চারিদিকে তাকিয়ে আলোর উৎসব দেখতে লাগলাম। হটাৎ পাশ থেকে এক বুড়ো মহিলার গান ভেসে এলো। তিনি তুর্কিশে বা এরাবিকে নিজের মাইক্রোফোন দিয়ে গান ধরেছেন; উদ্দেশ্য টাকা পাওয়া। ভরাট, অভিজাত কন্ঠ; গান শুনতে শুনতেই উঠে ডলার ভাংগাতে গেলাম।

এখন এখানে ১০০ ডলার সমান ১৮৪০ লিরা চলছে, অর্থাৎ ১ লিরা সমান বাংলাদেশী ৬ টাকা ৮ পয়সা পড়েছে। দোকানে ঢুকেছি সিম কেনার জন্য, এরই মধ্যে তাকসিম মসজিদে এশার আজান হয়েছে; নামাজটা জামাতে পড়ব বলে সংকল্প করলাম।

সিমের দাম আকাশচুম্বী! এখানে ৩৫০ লিরার নীচে সিম পাওয়া দুষ্কর; সাথে ২৫-৪০ জিবি ইন্টারনেট থাকে এবং থাকে টকটাইম। ৩৫০ লিরা মানে আমাদের ২,১০০ টাকা। যাই হোক, আমি ৩০০ লিরা দিয়ে একটি সিম নিলাম এক সপ্তাহের জন্য; এটি একবারই ব্যবহার করা যাবে, আমার একবারই দরকার!

ফেরার পথে রাস্তা এলোমেলো হয়ে গেছে; গুগল ম্যাপ দেখে যখন মসজিদে গেছি, ততক্ষনে জামাত শেষ হয়ে গেছে কিন্তু ইমাম সাহেব তিলাওয়াত করছেন। এখানে সব মসজিদে একটি কালচার আছে; নামাজের সালাম ফেরানোর পরে ইমাম সাহেব প্রথমে কিছুক্ষণ তিলাওয়াত করবেন, এটা আসলে মোনাজাত এবং এর পরে আরো কিছুক্ষণ তিলাওয়াত করেন। সে পর্যন্ত প্রায় সবাই বসে থাকে, এরপর উঠে চলে যায়।

এ পর্যন্ত দুটি মসজিদে এমন নামাজ পড়ার সুযোগ হয়েছে; তাকসিমে আর আয়া সোফিয়ায়। অসম্ভব সুন্দর আর আকর্ষণীয় তাদের তিলাওয়াত; একেবারে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

রাতের খাবার কোথায় খাব, কি খাব এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি! এখানে আছে আমার ফেসবুক বন্ধু মেহেদী, সে নানান রকম তথ্য দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছে। দেখে শুনে একটা ছোট রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম, এখানে ভাত আছে, সেই ভাত আবার আঠা আঠা এবং কিছুটা হলদেটে; এটা বিশেষভাবে রান্না করা হয়েছে। আমি খেলাম ভাত, গরুর গোস্তের কারি এবং ডিমচপের মত দেখতে কিমা দিয়ে বানানো একটা চপ; প্রাইম ট্যুরিস্ট এরিয়াগুলোতে খাবারসহ সবকিছুর দাম অত্যধিক।

হেঁটে এসেছিলাম, ট্যাক্সিতে ফিরব ভেবেছিলাম, কিন্তু মেহেদী নিষেধ করল; বলল, এখান ট্যাক্সি ড্রাইভাররা ডাকাত, আপনি বরং হেঁটেই যান; পরে বুঝেছি, এরা আসলে ডাকাত না, ডাকাতের বড় ভাই, সে আলোচনা পরে। আমি হাঁটা শুরু করলাম, ঠান্ডায় হাঁটতে খারাপ লাগছে না।

এখানে একমাত্র কম দামে পাওয়া যায় আপেল; আমি ফেরার পথে ৪ টি আপেল কিনলাম মাত্র ৮ লিরা দিয়ে, বাংলা টাকায় ৪৮ টাকা। বাংলাদেশে এই আপেল পড়ত ১০০ টাকার বেশী।

বাতির নীচে থাকে অন্ধকার; আমেরিকা সারা পৃথিবীকে সাহায্য দিয়ে বেড়ায় কিন্তু নিজের দেশে হোমলেস মানুষ বোঝাই! এখানেও তেমনই দেখলাম; এক হ্যান্ডসাম যুবক এই ঠান্ডার মধ্যে ফুটপাতের পাশে একটা পিলারের কোনায় নিজের বিছানা পেতেছে! একটা চাদর মুড়ি দিয়ে সে শুয়ে শুয়ে সম্ভবতঃ জীবনের হিসেব মেলাচ্ছে!

আমি তাকে পেরিয়ে গিয়েও আবার ফিরে এলাম; মায়া লাগলো। একটা ছবিও তুললাম গোপনে, পাছে সে কষ্ট পায়। মনে হলো, এখানে এটা একটা রেগুলার ব্যাপার, কেউ এটাকে পাত্তাই দিচ্ছে না অথচ রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে আধুনিক পোশাক পরিহিত কত নারী পুরুষ; যেমন আমাদের দেশে দেখা যায়!

তাকসিম স্কয়ার - ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী ২ - Taksim Square

আমি গুগল ম্যাপকে পুঁজি করে হেঁটে চলেছি; এই যুগে স্মার্ট ফোন আর ইন্টারনেট থাকলে তেমন কোন অসুবিধা হয় না। আমার মিশ্র অনুভূতি হয়েছে ইস্তাম্বুল নিয়ে; ভালো এবং খারাপের একটা মিশ্রণ এখানে আছে, যেমন আছে আমাদের দেশে, আরো ভালোভাবে বুঝে তবেই তা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব ইন শা আল্লাহ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top